২০২২ সালের নতুন আদমশুমারি প্রথমিক ঘননার কাজ শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত জনশুমারি ও গৃহগণনার ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জন। এরমধ্যে মুসলমান ৯১.০৪ শতাংশ।
বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
আদমশুমারি ২০২২ঃ BICC Report Click Here
হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস: কারণ কি দেশত্যাগ নাকি অন্য কিছু?
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) ২০২২ সালের আদমশুমারি ও গৃহগণনা প্রতিবেদনে দেশে হিন্দু জনসংখ্যা কমে যাওয়ার দুটি কারণ উল্লেখ করেছে। প্রথমত, হিন্দুদের আউট মাইগ্রেশন হচ্ছে, অর্থাৎ হিন্দুরা দেশ ছাড়ছে। দ্বিতীয়ত, হিন্দু জনগোষ্ঠীর মধ্যে মোট প্রজনন হার বা টোটাল ফার্টিলিটি রেট তুলনামূলক কম। অর্থাৎ হিন্দু দম্পতিরা তুলনামূলকভাবে কম সন্তান জন্ম দেন।
ধর্ম | আগের জনসংখ্যা (%) ২০১১ | আগের জনসংখ্যা (%) ২০২২ |
মুসলমান | ৯০.৩৯ শতাংশ | ৯১.০৪ শতাংশ |
হিন্দু | ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ | ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ |
বৌদ্ধ | শূন্য দশমিক ৬২ শতাংশ | শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ |
খ্রিস্টান | শূন্য দশমিক ৩১ | শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ |
শূন্য দশমিক ১৪ | শূন্য দশমিক ১২ শতাংশে |
১) মুসলিম জন্মহার বৃদ্ধি কিন্তু সেই অনুপাতে হিন্দু জম্মহার হ্রাস: জন্মনিয়ন্ত্রণ কল্পে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে অনেক মুসলিম পরিবারকেই অনীহা প্রকাশ করতে দেখা যায় (যেটি গ্রামাঞ্চলে বেশী প্রকট); পক্ষান্তরে পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণে হিন্দু পরিবারগুলো অনেক বেশী অগ্রগামী। ফলে, মুসলিম জনসংখ্যা আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পেলেও সেই অনুপাতে হিন্দু জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়নি। ফলে ক্রমবর্ধমান বিপুল সংখ্যক মুসলিম জনসংখ্যার বিপরীতে হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
২) অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত বা কনভার্শন: অনেক হিন্দুকেই ধর্ম পরিবর্তন করে অন্য ধর্ম গ্রহণ করতে দেখা যায় (হতে পারে ইসলাম/বৌদ্ধ/খ্রিস্ট ধর্ম)। কিন্তু সে তুলনায় ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের সাধারনত অন্য ধর্মে ধর্মান্তারিত হতে দেখা যায়না। ধর্মে অবিশ্বাস জন্মালে একজন মুসলিম ব্যক্তি সাধারণত ধর্মে অবিশ্বাসী বা সংশয়বাদী হয়ে যায় কিন্তু অন্য ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়না। এটিও হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাস পাওয়ার একটি কারণ বলে আমি মনে করি।
দেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ৮ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ৮২৪ জন পুরুষ, ৮ কোটি ৩৩ লাখ ৪৭ হাজার ২০৬ জন নারী এবং ১২ হাজার ৬২৯ জন তৃতীয় লিঙ্গের জনগোষ্ঠী।
বিবিএস জানায়, এক দশকে দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ১৪ হাজার ৯১৯ জন। সর্বশেষ ২০১১ সালের জনশুমারির অনুযায়ী, দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ৪০ লাখ ৪৩ হাজার ৬৯৭।
এতে আরও বলা হয়, দেশে ৯৮ জন পুরুষের বিপরীতে ১০০ জন নারী। ১০ থেকে তার বেশি বয়সী মানুষের মধ্যে ২৮ শতাংশ অবিবাহিত ও ৬৫ শতাংশ বিবাহিত। সাক্ষরতার হার ৭৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধিতার হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসেবেই বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু ৭৪.২ বছর। আর পুরুষদের ৭১.১ বছর।
আদমশুমারি নিয়ে কিছু তথ্য
* ভারত উপমহাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ব্রিটিশ আমলে, ১৮৭২ সালে। পরের আদমশুমারি হয় ১৮৮১ সালে। এরপর থেকে এই উপমহাদেশে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি হয়েছে।
* বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয় ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে।
* প্রতি ১০ বছর পরপর ১৯৮১, ১৯৯১, ২০০১ ও ২০১১ সালে আদমশুমারি ও গৃহগণনা হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে ২০২১ সালে না হয়ে একবছর পিছিয়ে যায়।
* পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটি ৬৩ লাখ। সর্বশেষ ২০১১ সালের আদমশুমারিতে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি ২৩ লাখ। প্রতি ১০ বছরে অন্তত দুই কোটি জনসংখ্যা বাড়ে বলে ধারণা করা হয়।
* দুই হাজার এগার সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ ও ভারত নিজেদের সীমান্ত এলাকায় আদমশুমারি করে।