ঐতিহ্যবাহী পহেলা বৈশাখ হালখাতা ১৪২৯ উদযাপন যেভাবে হয়

মুঘল সম্রাট আকবরের আমলে যা ছিল খাজনা উপলক্ষ, তা এখন উদ্যাপনের উৎসব। এ নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে, উদ্যাপন করতে সমগ্র বাঙালি জাতি আজ এক কাতারে। ধর্ম, বর্ণ, গোত্র নির্বিশেষে বাঙালির একমাত্র অসাম্প্রদায়িক উৎসবের দিন এটি।

এরপর কৈশর ও যৌবনে ১ লা বৈশাখ যেমন রমনার বটমূল, বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গন,ছায়ানট এর সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান বিভিন্ন শিল্পী বাউল,ভাটিয়ালি,মুর্শিদি গানে গানে মুখরিত টি এস সি চত্বর সর্বপরি আবাহমান বাংলার ঐতিহ্য বহন কারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বর্নাঢ্য বৈশাখী পদ শোভাযাত্রা এবং নানা রঙ বেরঙের শঙ এবং বর্নিল পোষাকে ১ লা বৈশাখ দিনে দিনে বর্নাঢ্য হলেও শৈশবের প্রানের বৈশাখী মেলা আজও আমাকে নাড়া দেয়।
যুগযুগ ধরে বাঙালির সাংস্কৃতির ধারক ও বাহক ১ লা বেশাখ, “হালখাতার” যে নিদর্শন তা আরও উজ্জ্বল ও মহিমান্বিত হয়ে দেশ বিদেশে উৎযাপিত হয়ে বাঙালির সাংস্কৃতির বার্তা বয়ে বেড়াক সারা বিশ্বে এ কামনা করি।

বাঙালির অনন্য ঐতিহ্য ‘হালখাতা

হালখাতা হল বছরের প্রথম দিনে স্টোর অ্যাকাউন্ট আপডেট করার প্রক্রিয়া। বছরের প্রথম দিনে, ব্যবসায়ীরা প্রাপ্য হিসাব সমন্বয় করে নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। এই জন্য, গ্রাহকদের তাদের বকেয়া নম্রভাবে পরিশোধ করতে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়; হ্যাপি হালখাতা কার্ড সেই বিশেষ দিনে দোকানে আসার আমন্ত্রণ।

এই উপলক্ষে, নববর্ষের দিনে, ব্যবসায়ীরা তাদের গ্রাহকদের মিষ্টি খাওয়ান। গ্রাহকরাও তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের পুরনো ঋণ পরিশোধ করে। অতীতে, ব্যবসায়ীরা তাদের সমস্ত হিসাব একটি মোটা খাতায় রাখতেন। এই বইটি পহেলা বৈশাখের দিন আপডেট করা হয়েছে। খাতা হালনাগাদ করা থেকে “হালাকারের” চেহারা।

হালে ফেরার আশা নিয়ে হালখাতার প্রস্তুতি

আগে হালখাতার দিন কয় আগে থেকেই ক্রেতাদের বর্ণিল কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ জানাতেন ব্যবসায়ীরা, ফুল আর রঙিন কাগজে পরিপাটি সাজে দোকান পেত অন্য চেহারা। দোকানে দোকানে ক্রেতাদের মিষ্টিমুখ করানো হত; সাথে থাকত ধর্মীয় নানা আচার।

সেই আড়ম্বর দিনে দিনে কমে এলেও পাইকার, স্বর্ণকার, মুদি কিংবা যারা বাকিতে ব্যবসা করেন, এমন অনেকে টিকিয়ে রেখেছিলেন বৈশাখী এ আয়োজন। মহামারীর মধ্যে সেটাও ছিল বন্ধ।

এবার করোনাভাইরাসের ত্রাস কমেছে, আসছে বৃহস্পতিবার ১৪২৮ বঙ্গাব্দকে বিদায় জানিয়ে শুরু হবে ১৪২৯।

ফোনেই জানানো হয় বাকির কথা, ছাপানো হয় না হালখাতার কার্ড

এখন আর হালখাতার সেই চিরচেনা রূপ দেখা যায় না। ধরনেও এসেছে পরিবর্তন। হালখাতার কার্ড বিতরণের পরিবর্তে চালু হয়েছে মোবাইলে মেসেজ দেওয়ার প্রচলন। আগের মতো লাল রঙের টালিখাতা, রঙিন কাগজ, মাটির হাঁড়ি, কলাগাছ দিয়ে দোকান সাজাতে দেখা যায় না।

হালখাতা উপলক্ষে আগে দোকানে দোকানে মিষ্টি বিতরণ করা হতো। কোনো ক্রেতা দোকানে এলেই আগে প্লেটে করে দেওয়া হতো মিষ্টি। ক্রেতারা সারা বছরের পুরোনো হিসাব-কিতাব পরিশোধ করতে আসতেন। ক্রেতাদের জন্য দোকানে রসগোল্লা, চমচম, কালোজাম, সন্দেশ, বুন্দিয়াসহ নানা বাহারি মিষ্টি, নিমকি ও ফলের আয়োজন থাকতো। এখন তা মোবাইল ফোনে অথবা ক্ষুদে বাত্তা জানিয়ে দেওয়া হয়।

হালখাতা বাঁধা পড়ছে লালখাতা বদলে

বাঙালি সমাজে হালখাতার এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য পুরান ঢাকার দোকানিরা অবশ্য এখনও তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, শাঁখারীবাজার, বাংলাবাজার ও ইসলামপুরের ব্যবসায়ীরা জানালেন, জাঁকজমকের সঙ্গে হালখাতা উদযাপন না করলেও নতুন বাংলাবর্ষের প্রথম দিনে লালসালু মোড়ানো খাতা দিয়ে হিসাব শুরু করবেন তারা। ব্যবসায়ীদের কাছে এখন হালখাতা মানে নতুন বছরে নতুন লালখাতা বা নতুন হিসাব খোলা। হালখাতা বাঁধা পড়ছে এখন নেহাত লালখাতা বদলে।

ব্যবসা-হালখাতা এসব আর কিছুই আগের মতো নেই। পরিবারের ঐতিহ্য রক্ষায় এখানে বসে আছি। এখন শুধু পারিবারিক পরম্পরা অনুযায়ী হালখাতা পালন করা হয়। পহেলা বৈশাখের দিন গণেশ ঠাকুরের নামে পূজা করা হবে। লালখাতার মধ্যে সিঁদুরের ফোঁটায় এক টাকার কয়েনের ছাপ দিয়ে নতুন হিসাব খোলা হবে। গ্রাহকরা এলে মিষ্টিমুখ করানো হবে। না করলে হয় না, তাই করা। ব্যবসার যে অবস্থা, তাতে করে মনে কোনো আনন্দ জাগে না।