ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করার নিয়ম, নিয়ত, দোয়া ও মাসালা আরবি

ঈদের নামাজে ইমাম কর্তৃক খুতবা পড়া সুন্নত এবং মুসুল্লিদের খুতবা শোনা ওয়াজিব। জুমার নামাজের ন্যায় প্রথমে বিষয় ভিত্তিক খুতবা এবং পরে সানি খুৎবা পাঠ করতে হয়। খুৎবার মাধ্যমে ঈদের নামাজের সমাপ্তি হয়। সাধারণত খুতবার পরে দোয়া করা হয়।

এরপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহর আগে তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে তাকবির বলবেন। প্রথম দু’বার কান পর্যন্ত হাত উঠিয়ে ছেড়ে দেবেন। কিন্তু তৃতীয়বার বলে হাত বেঁধে নেবেন। প্রত্যেক তাকবিরের পর তিনবার সুবহানাল্লাহ বলা যায় পরিমাণ থামবে।

নামাজের নিয়ম দেখুন  Video সহ

ঈদুল ফিতরের নামাজ পড়ার নিয়ত

তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে সূরায়ে ফাতেহার পরে একটা সূরা মেলাবেন। এরপর রুকু, সিজদা করে দ্বিতীয় রাকাতের জন্য দাঁড়াবেন। এবার অন্যান্য নামাজের মতো বিসমিল্লাহর পরে সূরা ফাতেহা পড়ে আরেকটা সূরা মেলাবেন। তারপর তিনবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলার মাধ্যমে তিনটা তাকবির সম্পন্ন করবেন। এখানে প্রতি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দেবেন এবং চতুর্থবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলে হাত না বেঁধে রুকুতে চলে যাবেন। এরপর সেজদা এবং আখেরি বৈঠক করে যথারীতি সালাম ফিরিয়ে নামাজ শেষ করবেন।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত (বাংলা): ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

ঈদুল ফিতরের নামাজের নিয়ত (আরবি): নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা রাকয়াতা সালাতি ঈদিল ফিতর, মায়া ছিত্তাতি তাকবীরাতি ওয়াজিবুল্লাহি তায়ালা ইকতাদাইতু বিহাযাল ইমাম, মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল কাবাতিশ শারীফাতি আল্লাহু আকবার।

ঈদুল ফিতরের নামাজের খুতবা

খুতবা : ঈদের নামাজ পড়ার পর ইমাম খুতবা দেবে আর মুসল্লিরা খুতবা মনোযোগের সঙ্গে শুনবে। অবশ্য অনেকেই খুতবা না দেয়ার ব্যাপারে শিথিলতার কথা বলেছেন। খুতবা না দিলেও ঈদের নামাজ আদায় হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন।

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত তাকবিরের ক্ষেত্রে অন্যান্য মাজহাবসহ অনেকেই প্রথম রাকাআতে তাকবিরে তাহরিমাসহ ৭ তাকবির আর দ্বিতীয় রাকাআতে ৫ তাকবিরে দিয়ে থাকেন। এতে কোনো অসুবিধা নেই।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথ নিয়মে ঈদের নামাজ আদায় করার তাওফিক দান করুন। ঈদের নামাজ আদায়ে যথাযথ নিরাপত্তা বজায় রেখে সুস্থ থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

ঈদের নামাজের দোয়া বা মোনাজাত

ঈদের সালাত আদায় করার জন্য কোন বিশেষ দোয়া নেই তবে সকল মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্য কল্যাণ কামনার জন্য এবং সকলেরই সুন্দরভাবে  ঈদ উদযাপন করতে পারে তা নিয়ে একটি মোনাজাতের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তায়ালার নিকট দোয়া প্রার্থনা করা যেতে পারে।

ঈদের জামাত সম্পর্কীয় মাসয়ালা

ইমাম সাহেব জুমার মতো দু’টি খুতবা দেবেন। তবে জুমার খুতবা দেওয়া ফরজ আর ঈদের খুতবা দেওয়া সুন্নত। কিন্তু ঈদের খুতবা শুনা ওয়াজিব। ওই সময় কথাবার্তা, চলাফেরা, টাকা উঠানো ইত্যাদি যেকোনো কাজ নিষেধ।

ঈদের নামাজের আগে নারী হোক কিংবা পুরুষ, বাড়িতে কিংবা মসজিদে অথবা ঈদগাহে নফল নামাজ পড়া মাকরূহ। সম্ভব হলে এলাকার সবাই একস্থানে একত্রে ঈদের নামাজ পড়া উত্তম। তবে কয়েক জায়গায় পড়াও জায়েজ।

ঈদের নামাজ না পড়তে পারলে কিংবা নামাজ নষ্ট হয়ে গেলে তার কাজা করতে হবে না, যেহেতু ঈদের নামাজের জন্য জামাত শর্ত। তবে বেশকিছু লোকের ঈদের নামাজ ছুটে গেলে বা নষ্ট হয়ে গেলে তারা অন্য একজনকে ইমাম বানিয়ে নামাজ পড়তে পারবেন।

কেউ ইমাম সাহেবকে দ্বিতীয় রাকাতে পেলে সালামের পর যখন ওই ব্যক্তি ছুটে যাওয়া রাকাতের (প্রথম রাকাত) জন্য দাঁড়াবে তখন প্রথমে সানা (সুবহানাকাল্লাহুম্মা), তারপর আউযুবিল্লাহ এবং বিসমিল্লাহ পড়ে ফাতেহা ও কেরাতের পর রুকুর পূর্বে তাকবির বলবে। ফাতেহার আগে নয়।

ইমাম তাকবির ভুলে গেলে রুকুতে গিয়ে বলবে, রুকু ছেড়ে দাঁড়াবে না। তবে রুকু ছেড়ে দাঁড়িয়ে তাকবির বলে আবার রুকুতে গেলেও নামাজ নষ্ট হবে না। বেশি লোক হওয়ার কারণে সহু সিজদাও দিতে হবে না।

ঈদের নামাজের আরো কিছু মাসআলা

ঈদের নামাজের কিছু মাসআলা রয়েছে আর এই সকল মাসালা গুলো অবশ্যই মুসলিমদের মেনে চলা উচিত। কারণ এই সকল মাসআলার মাধ্যমে আমরা সঠিকভাবে ইবাদত পালন করতে পারব। তাহলে চলুন জেনে নেই ঈদের নামাজের কিছু গুরুত্বপূর্ণ মাসআলা।

  • ঈদের নামাযের পূর্বে কোনো নারী অথবা পুরুষ যদি যদি নফল নামাজ আদায় করে তাহলে তা মাকরুহ হয়ে যায়।
  • ঈদের সালাত এলাকার সকল মুসুল্লিরা একসাথে হয়ে এক স্থানে ঈদের সালাত আদায় করা উত্তম। তবে বিভিন্ন স্থানে পড়া যাবে।
  • কোন কারণে যদি আপনারা ঈদের সালাত না পড়তে পারেন তাহলে এই নামাজের কোন কাজা নামাজ দেয়া যায় না। কারণ ঈদের সালাত জামাতের সাথে পড়া হয়। আর যদি আপনাদের ঈদের সালাত আদায় না করতে পারেন তাহলে আপনারা অন্য কোথাও বা বেশ কিছু লোকের মধ্যে থেকে একজন ইমাম নির্বাচন করে ঈদের সালাত আদায় করতে পারেন।
  • আপনাদের যদি শাওয়াল মাসের ১ তারিখে কোন ভাবে দ্বিপ্রহরের পূর্বে শরীয়ত সম্মতভাবে যেকোনো কারণে ঈদের নামাজ আদায় করতে না পারেন তাহলে শাওয়াল মাসের ২ তারিখে ঈদের সালাত পড়ার অনুমতি রয়েছে। কিন্তু এরপর আর এই সালাত আদায় করা যাবে না।

মহিলাদের ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম ও নিয়ত জেনে নিন

মুসলিম নারীরা রমজানের রোজার শেষে ঈদুল ফিতরের নামাজ ঈদগাহ অংশগ্রহণ করতে পারবেন এবং তাতে অংশগ্রহণ করতে পারবেন। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এমনটি নির্দেশ দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত উম্মে হাতিয়া রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাম আমাদের এই মর্মে আদেশ করেছেন যে “আমরা যেন মহিলাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার নামাজের জন্য বের হয় এবং নামাজ অংশগ্রহণ করেন।”

এই বর্ণনা জানা গেছে যে পরিণত বয়সকা, ঋতুবতী ও গৃহবাসী সবাই অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তবে ঋতুবর্তী মেয়েরা নামাজ আদায় থেকে বিরত থাকবেন কিন্তু কল্যাণ ও মুসলমানদের দোয়া অংশগ্রহণ করতে পারবেন। তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করেন যে, হে আল্লাহ রাসুল আমাদের মাঝে কারো কারো ওড়না নেই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বললেন “সে তার অন্য বোন থেকে অন্যায় নিয়ে পরিধান করবে.”

মহিলাদের ঈদের নামাজের নিয়ম

মহিলাদের ঈদের নামাজ  পুরুষদের মত। তবে এখানে কয়েকটি বিষয় জানতে হবে ।

প্রথম বিষয় : ঈদের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করতে হবে। একাকী আদায় করলে হবে না। এ হিসেবে কোন মহিলা বাড়িতে একাকী ঈদের নামায আদায় করতে চাইলে তার নামায আদায় হবে না।

দ্বিতীয় বিষয় : ঈদের নামাজে নারীদেরকে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অংশগ্রহণ করা সম্পর্কে অনুমতি দেননি বরং তা আদায়ের নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তা ওয়াজিব হিসেবে নয় বরং তাগিদ হিসেবে দেওয়া হয়েছে।

মহিলাদের ঈদের নামাজ নিয়ম ও নিয়ত ঈদের নামাজের কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রয়েছে, আসুন আমরা জেনে নেই মহিলাদের নামাজ পডার নিয়ম নিয়ত।

প্রথমে যেই ঈদের নামাজ আদায় করবেন সেই ঈদ অনুযায়ী প্রথমেই আপনাকে নিয়ত করতে হবে, এবং “আল্লাহ হু আকবর” বলে কাধ পজন্ত হাত তুলে হাত বাধতে হবে। তার পর “সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাস্মুকা ওয়াতাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা”। ছানা পডতে হবে।
৩ বার “আল্লাহ হু আকবর” বলে তাকবির বলতে হবে। তারপর প্রথম দুইবার কাহ পজন্ত।

তারপর সুরা ফাতিয়া সাথে যে কোন সুরা মিলায়া পডতে হবে। এর পর স্বাভাবিক নামাজের মত করে রুকু সিজদা করে দ্বিতীয় রাকায়াত জন্য ওঠে দাডাতে হবে।তারপর দ্বিতীয় রাকাতে জন্য সুরা ফাতিয়া সাথে অন্য সুরা মিলিয়ে পডে ৩বার “আল্লাহু আকবর” পডে ৩টি তাকবির সম্পপ করে ৪র্থ তাকবিরে “আল্লাহ হু আকবর” বলে হাত না বেধে রুকু তে যেতে হবে। এবার সেজডা, তাশাহুত, দুরুদ, দোয়া মাসুরা পডে সালাম ফিরিয়ে ঈদের নামাজ শেষ করতে হবে।