ফিতরা-২০২২ আদায়ের নিয়ম ও পদ্ধতি জেনে নিন। জনপ্রতি ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০ টাকা

জনপ্রতি ফিতরা সর্বোচ্চ ২৩১০, সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বছর (১৪৪৩ হিজরি সন) ফিতরার হার জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ৩১০ টাকা এবং সর্বনিম্ন ৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

শনিবার (৯ এপ্রিল) বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভায় এ হার নির্ধারণ করা হয়। গত বছরও সর্বোচ্চ ফিতরা দুই হাজার ৩১০ টাকা, সর্বনিম্ন ফিতরা ছিল ৭০ টাকা।

সভায় সভাপতিত্ব করেন সাদাকাতুল ফিতর নির্ধারণ কমিটির সভাপতি ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব হাফেজ মুফতি মাওলানা মোহাম্মদ রুহুল আমিন। পরে তিনি সভার বিষয়ে ব্রিফ করেন।

যেভাবে নিম্নয় হয় ফিতরা

সভায় সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হয় যে ইসলামি শরিয়াহ মতে মুসলমানরা সামর্থ্য অনুযায়ী গম, আটা, খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের যে কোনো একটি পণ্যের নির্দিষ্ট পরিমাণ বা এর বাজার মূল্য ফিতরা হিসেবে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করতে পারবেন।

আটার ক্ষেত্রে এর পরিমাণ এক কেজি ৬৫০ গ্রাম (অর্ধ সা’)। খেজুর, কিসমিস, পনির ও যবের ক্ষেত্রে তিন কেজি ৩০০ গ্রামের (এক সা’) মাধ্যমে সাদকাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করতে হয়। এসব পণ্যের বাজার মূল্য হিসাব করে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করা হয়।

উন্নতমানের গম বা আটা দিয়ে ফিতরা আদায় করলে ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৭৫ টাকা দিতে হবে। যব দিয়ে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ৩০০ টাকা, কিসমিস দিয়ে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৪২০ টাকা, খেজুর দিয়ে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ১ হাজার ৬৫০ টাকা এবং পনির দিয়ে ৩ কেজি ৩০০ গ্রাম বা এর বাজার মূল্য ২ হাজার ৩১০ টাকা ফিতরা দিতে হবে।

ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী এই পাঁচটি পণ্যের যে কোনো একটি পণ্য বা এর বাজার মূল্য দিয়ে সাদাকাতুল ফিতর আদায় করতে পারবেন।

ঈদে নতুন টাকা ২০ এপ্রিল থেকে যেখানে পাবেন।

ফিতরা আদায়ের নিয়ম ও পদ্ধতি

মনে রাখতে হবে-
যদি কোনো পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, শিশু-কিশোর ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, এবং মা-বাবাসহ মোট ৮ জন সদস্য থাকে তবে পরিবারের দায়িত্বশীল ব্যক্তি এ ৮ জনের ফিতরা আদায় করবেন। এভাবে হিসাব করে ফিতরা দিতে হবে।

ফিতরা যারা দেবেন
সামর্থ্যবান মুমিন নারী-পুরুষের ওপর ফিতরা আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্যবানদের অধীনস্ত পরিবারের সব সদস্যদের ফিতরাও দায়িত্বশীল ব্যক্তি আদায় করবেন। অর্থাৎ পরিবারের শিশু-কিশোর যদি অর্থের মালিক না হয় তবে বাবাই পরিবারের লোকদের ফিতরা আদায় করবেন।

এক কথায় সামর্থ্যবান নারী-পুরুষ, শিশু, কিশোর, যুবক, বৃদ্ধ সব স্বাধীন, পরাধীন এমনকি হিজড়া সম্প্রদারে ওপরই ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। বালেগ সন্তান যদি পাগল হয় তবে পিতার পক্ষ থেকে তা আদায় করা ওয়াজিব ৷

ফিতরা ওয়াজিব হওয়ার শর্ত
ঈদুল ফিতরের দিন কোনো স্বাধীন মুসলমানের কাছে জাকাতের নিসাব তথা সাড়ে ৭ ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে ৫২ তোলা রুপা অথবা তার সমমুল্যের নগদ অর্থ কারো কাছে থাকলেই ওই ব্যক্তির জন্য ফিতরা ওয়াজিব।

এ সম্পদ ঋণ এবং মৌলিক প্রয়োজনের অতিরিক্ত হতে হবে। তবে ব্যতিক্রম হলো- জাকাতের জন্য এ সম্পদ পূর্ণ এক বছর মালিকানায় থাকতে হবে, আর ফিতরার ক্ষেত্রে এক বছর থাকা শর্ত নয়। আর এসব ব্যক্তির জন্য ফিতরা গ্রহণ করাও হারাম।

আবার বাড়ি-ঘর, আসবাবপত্র, স্থাবর সম্পদের মূল্য (যদি ব্যবসার জন্য না হয়) জাকাতের নিসাবের অন্তর্ভূক্ত নয় ৷ কিন্ত ফিতরার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র,ঘর-বাড়ি ও স্থাবর সম্পদ, ভাড়া বাড়ি, মেশিনারীজ, কৃষিযন্ত্র ইত্যাদি (উপার্জনের জন্য না হলেও) এসবের মূল্যের হিসাবও ফিতরার নেসাবে অন্তর্ভূক্ত হবে ৷

ফিতরা যখন ওয়াজিব হয়

ঈদের দিন সুবহে সাদিকের পর সব সামর্থ্যবান মুমিনের ওপর ফিতরা আদায় করা আবশ্যক। এ সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে যদি কারো বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয় তবে ওই বাচ্চার জন্যও ফিতরা আদায় করতে হবে।ফিতরা কখন আদায় করতে হয়
ঈদের নামাজে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করা সর্বোত্তম। তবে আগে থেকে ফিতরা আদায়ে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। আর যদি কেউ কোনো কারণে ঈদের নামাজের আগে আদায় করতে না পারে তবে ঈদের পরেও তা আদায় করা যাবে। তবে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যাওয়ার আগেই ফিতরা আদায় করতেন। কেননা গরিব-অসহায় এ টাকায় কেনাকাটা করে ধনীদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবে।

একটি বিষয় লক্ষণীয়

সমাজের প্রায় সব মানুষই ৭০ টাকা হারে ফিতরা হিসাব করে থাকে। কিন্তু ফিতরা আদায়ের হিসাবটি মুলত এমন নয়, কারণ অনেক মানুষ আছেন, যারা অঢেল সম্পদের মালিক। তারা চাইলে জনপ্রতি সর্বোচ্চ ২ হাজার ২০০ টাকার চেয়ে বেশি ফিতরা দিতে পারেন। অথচ এ পর্যায়ের অনেক মানুষ ফিতরার ক্ষেত্রে ৭০ টাকা হিসাব করে ফিতরা দিয়ে থাকেন। এমনটি যেন না হয়। তাহলে অবস্থা অনুযায়ী ওই ব্যক্তির ফিতরা আদায়ে ইনসাফ হবে না। কেননা ফিতরা গরিবের আনন্দ বিনোদন ও উৎসব করার হক।

তাই কোনো ব্যক্তি যদি খেজুর দিয়ে ফিতরা দিতে চান তবে ওই ব্যক্তি উন্নত মানের আজওয়া খেজুর দিয়ে ফিতরা আদায় করা উচিত। এভাবে বাকি ৪ জিনিসের ক্ষেত্রেও উন্নত মানের দাম অনুযায়ী ফিতরা দেয়া জরুরি।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহর সব সম্পদশালী ব্যক্তিকে যার যার অবস্থান অনুযায়ী ফিতরা আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।