জাতীয় দলের ক্রিকেটার রুবেল মারা গেছেন

মস্তিস্কের ক্যানসারে আক্রান্ত জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক খেলোয়াড় মোশাররফ রুবেল মারা গেছেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন আজ বিকেলে ৫টায় তিনি মারা যান।
রুবেলের ব্রেন টিউমারের চিকিৎসা চলছিল প্রায় তিন বছর ধরে। তার রক্তে সোডিয়ামের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি শুরু হয় ডিহাইড্রেশন। তার সঙ্গে কিডনির ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে গেলে শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। যে কারণে সে সময় এক সপ্তাহ আইসিইউতে রাখা হয়েছিল তাকে।

প্রায় তিন বছর ধরে ব্রেইন টিউমারে আক্রান্ত বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল আজ ৫টায় মারা গেছেন।

ঢাকার একটি হাসপাতালে ৪০ বছর বয়সে শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। দুই হাজার উনিশ সাল থেকেই জটিল এই রোগে ভুগছিলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল।

স্ত্রী ও পাঁচ বছর বয়সী এক সন্তান রেখে গেছেন তিনি। শিক্ষাজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ছিলেন তিনি। বাংলাদেশের জাতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে পাঁচটি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন রুবেল।

দুই হাজার বিশ সালে সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন তিনি, কিন্তু গত বছর আবারও নতুন করে মস্তিষ্কে টিউমার ধরা পড়ে। গত মাসে বেশ গুরুতর অবস্থায় রুবেলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, চলতি মাসের ১৫ তারিখ বাসায় ফিরেছিলেন।

ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, আজ মোশাররফ হোসেন রুবেল আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়, সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ক্রিকেটার রুবেলের জানাজা মিরপুর স্টেডিয়ামে, দাফন বনানীতে

মোশাররফ রুবেলের জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হবে তার দীর্ঘদিনের পদচারণার মিরপুর শের-ই-বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। মঙ্গলবার (১৯ এপ্রিল) তারাবিহ নামাজের পর আনুমানিক রাত ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে জানাজার নামাজ। এছাড়া জানা গেছে, ক্রিকেটারকে বনানী কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

ক্রিকেটার রুবেলের চিকিৎসা

শুরুর দিকে যখন মস্তিষ্কের টিউমার ধরা পড়ে তখন সার্জারির জন্য প্রায় দেড় কোটি টাকার প্রয়োজন ছিল বলে তিনি ফ্ল্যাট বিক্রি করে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

ঢাকা ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়েছে বলে সার্জারির আগেই ততদিনে এক কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছিল বলে জানান, বন্ধু জাহিদুর রহমান।

বাঁ হাতি স্পিন ও লেট অর্ডারে ব্যাটিং- দুই মিলিয়ে ঢাকার ক্রিকেটে দ্রুতই মানিয়ে নিয়েছিলেন রুবেল। সাকিব আল হাসান-আব্দুল রাজ্জাকদের পূর্বে বাংলাদেশের অন্যতম সেরা স্পিনার মোহাম্মদ রফিকের অবসরের পর জাতীয় দলে ডাক পেয়েছিলেন তিনি।

বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক হয় রুবেলের। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ৫টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ হলেও ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটে ১১২ ম্যাচে নিয়েছেন ৩৯২ উইকেট। জাতীয় দলের হয়ে ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ খেলেন বাঁহাতি এই স্পিনার।

ক্রিকেটার রুবেলের বিদ্রোহী

বাংলাদেশের জার্সি গায়ে ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক হয় রুবেলের। জাতীয় দলের হয়ে মাত্র ৫টি ওয়ানডে খেলার সুযোগ হয় কিন্তু কয়েক মাস পরেই কথিত বিদ্রোহী ক্রিকেটারদের লিগ, ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে যোগ দেয়ায় রুবেল বেশিদিন খেলতে পারেননি জাতীয় দলে। তখন আইসিএল গামী ক্রিকেটাররা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের কাছে অবসরের চিঠিও দিয়েছিলেন। ২০১৬ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে দলে ডাক পেয়েছিলেন রুবেল২০০৯ সালে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তখন বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে ফেরেন মোশাররফ রুবেল।

২০০১-০২ মৌসুম থেকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছেন এই বাহাতি স্পিনার। রুবেল ঘরোয়া ক্রিকেটে তিন ফরম্যাটেই অবদান রেখেছেন।

২০১৩ সালে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের ফাইনাল ম্যাচে ম্যাচ সেরার পুরষ্কার পেয়েছিলেন। যদিও মূলত ছিলেন বাহাতি স্পিনার কিন্তু প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তার নামের পাশে রয়েছে ৩৩০৫ রান, সেঞ্চুরিও করেছেন দুটি, ১৬টি হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি বাংলাদেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি ৩৯২টি উইকেট নিয়েছিলেন।

ব্রেইন টিউমার ধরা পড়ার আগে শেষবার ২০১৯ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ম্যাচ খেলেছিলেন মোশাররফ রুবেল।