এ বছর শবে ক্বদরের রাত শুরু হবে ২২ এপ্রিল শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে। ২১ তারাবিহ এর রাত )
শবে কদর রমজানের শেষ দশকে পাওয়া যায়। যারা ইতেকাফে বসেন তারা তো খুব সহজেই এই ফযিলত পূর্ণ রাতটি পায় কিন্তু যারা ইতিকাফে বসতে পারে না তাদের উপায় কি হয়?
সারারাত ঘুম অথবা অহেতুক কাজে সময় নষ্ট ।
শবেকদর রাত্রি যেভাবে পাবেন
শেষ দশ রাত একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় বের করে নিন । হতে পারে সাহরি আগে এক দুই ঘণ্টা। আর এটাই বেটার মনে করি । তবে যার যার সুবিধা।
এই সময়ে সাধ্যমত নফল ইবাদাত করবো । নামায পড়বো , কুরআন পড়বো ( আপনার মুখস্থ যা আছে । হতে পারে শুধু সূরা ফাতিহা । কুরআন পড়া মানে কুরআন শরীফ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়া না । )
যিকির করবো । আর বেশি বেশি এস্তেগফার দুআ কান্নাকাটি করে নিজের পরিবার পরিজনের সকলের জন্য মাগফিরাতের দুআ করবো । কান্না না আসলে কান্নার ভান করবো।
-হাদিসের ভাষ্যমতে শেষ দশ রাতের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদর হয়। কিন্তু আমরা যদি প্রতি রাতেই একটু ইবাদাত করি তাতে তো কোন ক্ষতি নেই । বরং রমজান চলে যাচ্ছে । শেষ মুহূর্তে একটু তো বেশি ইবাদাত করা যেতেই পারে । আর হয়ত এই বরকত ময় রমজান আর জীবনে না ও আসতে পারে।
কি সম্ভব হবে না এই নয় দশটা রাত একটু জেগে ইবাদাত করার?
-অনেকেই ভাবে ২৭ এ রাত শবে কদর । এটা কিন্তু নির্দিষ্ট না । হতেও পারে নাও পারে। কিন্তু এরপর আরো একটা বিজোড় রাত আছে ২৯ এর রাত। এটা অনেকেই ভুলে যান ঈদ আসতেছে এই আনন্দে।
বছরের শ্রেষ্ঠতম রাত
আরবি লাইলাতুল কদরের ফারসি হলো- শবে কদর। বাংলায় শবে কদর বা লাইলাতুল কদরের কয়েকটি অর্থ হতে পারে। কারণ, আরবি কদর শব্দটি ব্যাপক অর্থবহ। তন্মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ রাত, রিজিক বণ্টনের রাত, নির্দিষ্ট ও নির্ধারিত সময় এবং ভাগ্যরজনী ইত্যাদি অন্যতম। অর্থ যেটাই ধরে নেওয়া হোক— এই রাতটি সারা বছরের শ্রেষ্ঠতম রাত। এ রাতের ইবাদতের প্রতি বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় শবেকদরে ইবাদত করবে, তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৭৬০; বুখারি, হাদিস : ২০১৪)
শবে কদর সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আমি কোরআন নাজিল করেছি লাইলাতুল কদরে। তুমি কি জানো, লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।’ (সুরা কদর, আয়াত: ১-৩)
কোন রাতে কদর?
শবে কদর কবে? হাদিস শরিফে এসেছে, ‘তোমরা শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করো।’ (বুখারি, হাদিস : ২০১৭)
উবাদা ইবনে সামিত (রা.) থেকে বর্ণিত যে, রাসুল (সা.) ‘লাইলাতুল ক্দর’ এর ব্যাপারে খবর দিতে বের হলেন। এ সময় দু্ইজন মুসলমান ঝগড়া করছিলেন। তখন নবী কারিম (সা.) বললেন, ‘আমি আপনাদের ‘লাইলাতুল কদর’ এর ব্যাপারে অবহিত করতে বের হয়েছিলাম। কিন্তু অমুক অমুক ব্যক্তি বিবাদে লিপ্ত হওয়ায় তা (সেই জ্ঞান) উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। আশা করি, উঠিয়ে নেওয়াটা আপনাদের জন্য বেশি ভালো হয়েছে। আপনারা সপ্তম (২৭ তম), নবম (২৯ তম) এবং পঞ্চম (২৫ তম) তারিখে এর সন্ধান করুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৪৯)
যে রাত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি
হাদিসবিশারদ ও শরিয়তের গবেষকরা বলেন, রমজান মাসে নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য সুস্পষ্ট দলিলের প্রয়োজন। তবে অন্যান্য রাতের চেয়ে শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোর কোনো একটিতে হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আর এর মধ্যে ২৭তম রাতে হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। বিভিন্ন হাদিস থেকে এ ইঙ্গিত পাওয়া যায়। (ফাতাওয়াউল লাজনাহ আদ্-দায়িমা; সৌদি আরবের ফতওয়াবিষয়ক স্থায়ী কমিটির ফতওয়াসমগ্র : ১০/৪১৩)
বেশি বেশি ইবাদত হোক…
তাই একজন মুসলিমের নির্দিষ্ট কোনো রাতকে লাইলাতুল কদর হিসেবে চিহ্নিত করা উচিত নয়। বরং শেষ দশকের সবরাতেই যথাসম্ভব বেশি বেশি ইবাদত করা চাই। বিশেষত শেষ দশকের বেজোড় রাতগুলোতে রমজানের অন্যান্য রাতের তুলনায় বেশি বেশি ইবাদত, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল ও কোরআন তেলাওয়াত করা চাই।
এটিই নবী (সা.)-এর আদর্শ। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত যে তিনি বলেন, ‘রমজানের শেষ) দশ রাত শুরু হলে— নবী (সা.) কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং তার পরিবারের সবাইকে (ইবাদাতের জন্য) জাগিয়ে দিতেন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২০২৪; সহিহ মুসলিম : ১১৭৪)