পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর হাসি বাংলাদেশের মানুষের হাসি।

দাউদ কিম,বাংলাদেশে এসেছেন এক সপ্তাহের বেশি। সময় টিভির সাথে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে কিছু অংশ তুলে ধরলাম। উপস্থাপিকা জিজ্ঞেস করেছিলো,

কেমন লাগছে বাংলাদেশ ট্রিপ!! 

উওরে বললেন, এটা আশ্চর্যজনক,আসলে আমি এখানে এক সপ্তাহ আগে এসেছি। এখনো অনেক জায়গা দেখা হয়নি। এখানে সবই ভালো লাগছে। মানুষ অনেক ভালো।সুন্দর ভবন,মানুষের হাসি খুব সুন্দর। আতিথেয়তা খুবই ভালো লাগছে আমার কাছে। তাই আমি এখানে সত্যিই উপভোগ করছি। উপস্থাপিকার এরপরের প্রশ্ন ছিলো,

দাউদ কিম এর গানের ভিডিও দেখুন

আপনার ভিডিও তে বলেছেন সবার মুখেই হাসি দেখছেন?

উত্তরে তিনি বলছেন, হ্যাঁ এটা সত্য, এটা পুরোপুরি ভাবে সত্য। আসলে আমি অনেক অবাক কারন কোরিয়ায়, কেউই একে অন্যের দিকে তাকায় না যদিও চোখে চোখ পড়ে ঐভাবে তাকায় না। কখন কোন রিয়েক্ট করে না। কিন্তু এখানে যখন আমি কাউকে দেখি তারা সব সময় হাসে তাই আমি সত্যিই অবাক হয়েছি। আরো বলেন, আমি এখানে এসে দেখি তারা কোরিয়ান সংস্কৃতিকে পছন্দ করে সত্যিই জানতাম না। এবং আমি সত্যিই এটার প্রসংশা করছি। ইউটিউবার হওয়া নিয়ে বললেন, আমি ১০ বছর আগে থেকে ইউটিউবে কাজ করি। গান দিয়ে শুরু করি এর পর ট্রাভেলিং কনটেন্ট বানানো শুরু করি। ৩/৪ বছর আগে আমার সফলতা আসে। এখন আমি এখানেই।

উপস্থাপিকা প্রশ্ন করেছিল, যখন আপনি মুসলমান হয়েছিলেন তখন কি আপনার কোন অসুবিধা হয়েছিল?

তখন তিনি উত্তরে বলেছিলেন, অনেক সমস্যা হয়েছিল নামাজ পড়ার জায়গার অভাব ছিল কারণ কোরিয়ায় একটিই মসজিদ আছে। আপনি জানেন সেখানে 60 মিলিয়ন লোক বাস করে  কিন্তু একটিমাত্র মসজিদ। সবচেয়ে কঠিন জিনিস হচ্ছে খাবার কারন কোরিয়াতে হালাল খাবার পাওয়া খুবই কষ্টকর। যাইহোক আমি উপায় বেরকরে নিয়েছি আমি খাবার অর্ডার করি, রান্না করতে জানি। তারপরও কিছু অসুবিধা আছে কারণ মানুষ চিন্তা -ভাবনা তারা মনে করে ইসলাম অদ্ভুত, ইসলাম প্রতিহিংসার শিখায়। আমি যখন মানুষের সাথে কথা বলি তারা আমাকে বুঝাতে পারেনা তারা ভাবে কেন একজন কোরিয়ান মুসলিম হয়েছে!

কাবাঘর দেখার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলেন?

তখন বলেন দাউদ ওহ্! এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক ছিল। এটা আমার প্রথম বার। আমি সত্যিই কল্পনা ভাবিনি যে আমি মক্কা গিয়ে কাবাকে আমার নিজের চোখে দেখতে পারব। যখন দেখি কাবার ভিতরটা আমি খুবই অবাক হই, কারণ, এটা আমার ঘরের মতো মনে হয়েছিল। যেন আমি আমার ঘরে ফিরে এসেছি। যদি আমি সেখানে প্রথমবার গিয়েছিলাম। তাই এটা আমাকে অনেক প্রবাহিত করে। এবং এখনও যখন কাবায় যাবার স্মৃতি ভাবি খুব ভালো লাগে।

মুসলমান হওয়ার পর আপনার পরিবারে কোনো প্রতিক্রিয়া এসেছিলো কিনা?

এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রথমে তারা সবাই সমর্থন করেছিল। কিন্তু আসলে আমার মা এই একজন ই আমাকে এই বিষয়ে সমর্থন করেছিলেন। আসলে সেই পথ তৈরি করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আমার সাথে আর কথা বলে না। তারা তাদের পরিবারের মুসলমান সদস্য চায়না। কিন্তু আমি চেষ্টা করছি তাদের কে সঠিক পথে আনার। কারণ ইসলামে বলা হয়েছে পরিবারের সদস্যরা আমাকে না বুঝলেও আমি তাদের সঠিক পথে আনার চেষ্টা করতে হবে। আর ভালো ছেলে হওয়াটাও জরুরি আর একজন ভালো পরিবারের সদস্য হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ । আমি চেষ্টা করছি । ইনশাল্লাহ আল্লাহ আমাকে সাহায্য করবেন।

আপনি গান গাইতে ভালবাসেন এবং আপনি একজন গায়ক? ছেড়ে দিয়েছেন?

এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,হ্যাঁ আমি গান গাওয়া ছেড়ে দিয়েছি। অনেক কারন রয়েছে ছেড়ে দেওয়ার, প্রথম কারণ আমি কনটেন্ট তৈরি করতে পছন্দ করি, আমার ভ্রমনের ভিডিও তৈরি করা নেশা। তাই আমি এখনে আরো ফোকাস করতে চাই। বিশেষ করে কে-পপ ইন্ডাস্ট্রিতে ইসলামিক মূল্যবোধের বিরুদ্ধে অনেক কিছু রয়েছে, অনেক কিছুই রয়েছে। আসলে আমি জানি অনেকেই কে-পপ পছন্দ করে, এবং আমি নিজে গর্বিত। কিন্তু কে-পপ আমার মূল্যবোধের বিরুদ্ধে। সুতরাং আমার মনে হয় আমি হয়তো অন্যভাবে গান গাইতে পারি। আমি নাসিদ বা আরো সুন্দর গান গাইতে পারি। আমি কে-পপ শিল্পে ফিরে আসতে চাই না।

দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়া তাদের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য কেমন??

এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা একটা মজার প্রশ্ন দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়া সম্পর্কে তথ্য পাওয়া সত্যিই কঠিন। অনেক পার্থক্য আছে মনে করি। আমি তাদের ব্যাপারে তেমন কিছুই জানিনা। আমি দুই বছর সেনাবাহিনীতে ছিলাম।হয়তো জানেন বিটিএস এর সদস্য ছিলাম সেখানে আমাদের বলা হয়েছে আপনাকে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুদ্ধ করতে হবে, আপনাকে শক্তিশালী সৈনিক হতে হবে। ওকে।
আপনি কি বিটিএসকে পছন্দ করেন?
উত্তরে বলেন। হ্যাঁ,আমার ভালো লাগে। ভালো লাগে কারণ তারা কোরিয়ান ইমেজ অনেক পরিবর্তন করেছে।

আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?

এর উত্তরে তিনি বলেন আমার জীবনের লক্ষ্য একজন ভালো মানুষ হওয়ার কারণ এ ভাবেই জান্নাতে যাওয়া যায়। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের জীবন জান্নাতের উদ্দেশ্যে তাই আমি আমার সময় নষ্ট করতে চাই না। আর একজন ভালো মানুষ হওয়া আমার লক্ষ্য এই যাত্রায় যোগ দিতেই আমি মুসলিম হয়েছি।

আমি সত্যিই বাংলাদেশকে ভালবাসি

বাংলাদেশে এমন একটি দেশ যেখানে আমি ভ্রমণ করতে চেয়েছিলাম আমি এখানে আসার পর আমার বন্ধুদের সাথেও বলেছি আমি এখানে কিছু করতে চাই আমি মনে করি এটি আমার জন্য বিশেষ একটি দেশ।বিশেষ কিছু অনুভব করি।

সর্বশেষে সময় টিভি কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছিলেন, সত্যিই আমি প্রশংসা করছি আমাকে সময় টিভি আমন্ত্রিত করার জন্য। আমি আমার গল্প শেয়ার করতে পেরে খুবই খুশি। আমি সত্যিই বাংলাদেশকে ভালবাসি তাই আমি আশাকরি খুব তাড়াতাড়ি আবার এখানে ফিরে আসব। আমি বাংলাদেশের মানুষের সাথে বারবার দেখা করতে চাই।